শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০১ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার: দিরাইয়ে নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বৃহস্পতিবারও নতুন করে হাওর প্লাবিত হয়েছে। ফলে এ পর্যন্ত দিরাইয়ে বোরো ধান আক্রান্তের হারও বেড়েছে। দিরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাঁধ ভেঙে ও পানি উপচে সুনামগঞ্জের দিরাই পৌরসভার ভরাম হাওর সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। এ হাওরে মোট ৩ হাজার ২শত হেক্টর ধানের আবাদ হয়েছিল। এছাড়া এ পর্যন্ত দিরাই উপজেলায় মোট আক্রান্ত জমির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার হেক্টর। এ বছর দিরাই উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে আবাদ করা হয়েছিল মোট ২৮ হাজার হেক্টর। বাকি বোরো জমিগুলোও প্রচণ্ড ঝুঁকিতে আছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি অফিস।
এদিকে গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নদীতে পানি পূর্ণ হয়ে একের পর এক হাওরে প্রবেশ করছে। গত বুধবারও সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার দুটি হাওরে পানি প্রবেশ করে। এরমধ্যে চাপতির হাওরে বাঁধ উপচে ও উদগল হাওরে বাঁধ ভেঙে এসব পানি প্রবেশ করে। দিরাই উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোরে উপজেলার জগদল ইউনিয়নের চাতলের বেড়িবাঁধ ডুবে উপচে পানি প্রবেশ করেছে চাপতির হাওরে। এছাড়া সরমঙ্গল ইউনিয়নের মাছুয়ার খাড়া ভেঙে উদগল হাওরে পানি সকাল ৮টার দিকে প্রবেশ করছে। সূত্র আরো জানায়, চাপতির হাওরে মোট ৪ হাজার ৭শত হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছিল। হাওরটির মধ্যখানে চাতলের বাঁধ নামে একটি বাঁধের কারণে দুটি অংশে ভাগ হয়ে যায়। গত ১লা এপ্রিল বৈশাখির বাঁধ ভেঙে হাওরের চাতল বাঁধের দক্ষিণের অংশ ডুবে যায়। এরপর থেকে এই বাঁধের উত্তরের অংশ ছিল চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। হাওরের জমির বোরো ফসল রক্ষার স্বার্থে সাধারণ কৃষকরা দিনরাত পরিশ্রম করলেও অবশেষে তাদের সকল শ্রম পণ্ড হয়ে গত বুধবার ভোর থেকে বাঁধ উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করছে। এ হাওরে করিমপুর ইউনিয়নের মাটিয়াপুর, করিমপুর, তাজপুর, কচুয়া, টুকদিরাই, ধীতপুর ও হলিমপুর; জগদল ইউনিয়নের জগদল, রায়বাঙ্গালী, মাতারগাঁও, ভাটিয়ারগাঁও, বড়কাপন, কলিয়ারকাপন, রাজনগর, সিংহনাথ, কালধর, বকশিওরপুর, চান্দপুর, কামরীবিজ, নূরপুর, সারংপাশা, দৌলতপুর ও নগদীপুর; তাড়ল ইউনিয়ন তাড়ল, শালিয়ারগাঁও, কিতাম্বরপুরসহ গ্রামগুলোর কৃষকদের জমি থাকায় তাদের পরিবারে কান্নার রোল পড়েছে।
অন্যদিকে বুধবার সকাল ৮টা থেকে সরমঙ্গল ইউনয়নের মাছুয়ারখাড়ার বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে। এ হাওরে জমির পরিমাণ ১ হাজার ৩শত হেক্টর বলে দিরাই উপজেলা কৃষি অফিস জানায়। সূত্র মতে, উপজেলার সরমঙ্গল ইউনিয়নের উদগল হাওরের ফসলহানিতে ইউনিয়নের সরমঙ্গল, জারলিয়া, চিতলা, হাসিমপুর, ধনপুর চণ্ডিপুরসহ এলাকার গ্রামগুলোতে হাহাকার পড়েছে। এলাকার মানুষের একমাত্র ফসল বোরো ধান কাটতে না পারায় জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলেও অনেকেই জানান। তাছাড়া ধান পরিপক্ক না হওয়াতে কোনভাবেই তা কাটতে পারছেন না কৃষকরা।